সাহসী নাবিক কলম্বাসের অজানা তথ্য
নিউজ ডেস্ক
ফাইল ছবি
ইতালির জেনোয়া শহরের এক সাহসী নাবিক কলম্বাস বদলে দিয়েছিলেন ইতিহাসকে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিসেবেই তিনি পরিচিত। তার বাবার নাম ডোমেনিকো কলম্বো আর মায়ের নাম সুজানা ফনটানারোসা।
এই সাহসী নাবিকের বাবা ছিলেন মধ্যবিত্ত উল ব্যবসায়ী। তার একটা পনিরের দোকানও ছিল, যেখানে বালক কলম্বাস কাজ করতেন। দশ বছর বয়সে তিনি প্রথম সমুদ্রযাত্রায় যান তার ভাইয়ের সঙ্গে।
১৪৭৩ সালে যোগ দেন এক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানের কাজে বিভিন্ন সময় সমুদ্রযাত্রায় যান তিনি। এর মাধ্যমেই সমুদ্রের নেশায় পড়ে যান তিনি। সে সময় পৃথিবী গোল না চ্যাপ্টা তা নিয়ে বিতর্ক ছিল বিজ্ঞানী ও ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে। তবে পৃথিবী যে গোল সে সম্পর্কে বিভিন্ন আবিষ্কারের মাধ্যমে সমর্থন জোরালো হচ্ছিল। বিভিন্ন পণ্ডিতের মতবাদ নিয়ে কলম্বাস নিজে চিন্তাভাবনা করতেন। চলুন জেনে নেয়া যাক কলম্বাস সম্পর্কিত আরো অজানা কয়েকটি তথ্য-
কলম্বাসের জন্ম কোথায় এবং কখন আমরা জানি না: ইতিহাসবিদরা বলেন, কলম্বাস উত্তর ইতালির জেনোয়া প্রজাতন্ত্রের কোনো এক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু জেনোয়া শহরের কোথায় কলম্বাস জন্মগ্রহণ করেন এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত না। ১৪৫১ সালের আগস্ট ও অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে কলম্বাসের জন্মদিন ধরা হলেও কিছু সূত্রের মতে, ১৪৫০ সালের অক্টোবরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
চার ভাইবোনদের মধ্যে তিনি বড়: কলম্বাসের তিন ভাইয়ের নাম বার্টোলোমো (তিনিও একজন পরিভ্রমণকারী হয়ে ওঠেন এবং কলম্বাসের সঙ্গে যোগ দেন), জিওভ্যানি পেলেগ্রিনো এবং জিয়াকোমো। তাদের বিয়ানশিনেত্তা নামে একটি বোনও ছিল।
তার প্রথম অভিযান সম্ভবত নিউ ওয়ার্ল্ড নয়: কলম্বাসের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু ইতিহাসে লেখা হয়নি। কিন্তু একজন যুবক হিসেবে তিনি উত্তর আফ্রিকার উপকূলে স্প্যানিশ জাহাজগুলোতে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৪৭৪ সালে এজেন সাগরের চিয়োস দ্বীপে অভিযানের জন্য তাকে ভাড়া করা হয়। আর সেই অভিযানই ছিলো কলম্বাসের প্রথম জাহাজ যাত্রার সুচনালগ্ন।
কলম্বাসের দুই ছেলে: তার প্রথম ছেলে ডিয়েগো বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন এবং সেইসঙ্গে ইন্ডিজের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার বা তাকে ছেড়ে দেয়ার (ইতিহাসবিদরা নিশ্চিত না) পরে কলম্বাস আবারো বিয়ে করেন এবং তার দ্বিতীয় পুত্র ফার্দিনান্দ জন্মগ্রহণ করেন।
তার চুল জীবনের প্রথম দিকেই সাদা হয়ে যায়: কলম্বাস স্বর্ণকেশী চুল নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুত্র ফার্দিনান্দ জানায়, মাত্র ৩০ বছর বয়সেই কলম্বাসের চুল সাদায় পরিণত হয়।
তিনি উত্তর আমেরিকার মূল ভূখন্ডে কখনও পা রাখেননি: নিউ ওয়ার্ল্ডের অংশ হিসেবে কলম্বাস পা দিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মধ্য আমেরিকা।
চারটি ট্রিপের মাধ্যমে তিনি নিউ ওয়ার্ল্ড অভিযান করেন: ১৪৯২ সালে প্রথম ভ্রমণের পর কলম্বাস ১৪৯৩ সালে উপনিবেশের হিস্পানিওলা (বর্তমানকালের হাইতি ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র) ফিরে আসেন। ১৪৯৮ সালে ত্রিনিদাদ ও দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে যান এবং ১৫০২ সালে তার শেষ যাত্রায় তিনি পানামা পৌঁছান।
কলম্বাস একজন লেখক ছিলেন: তার অভিযান যাত্রা সম্পর্কিত কলম্বাস দুটি বই লিখেন। ‘বুক অফ প্রিভিলেজ’ বইয়ে রয়েল চার্টার, প্যাপল লেটার এবং পোপ, স্প্যানিশ রয়্যালটি সহ অন্যান্য আইনী নথি সম্পর্কিত এবং তার নিউ ওয়ার্ল্ড অভিযানের বিষযয়ে লেখা হয়েছে। তার দ্বিতীয় বই ‘বুক অব প্রফেসিস’ এ তিনি দাবি করেন যে, তার সমস্ত যাত্রা একটি ঐশ্বরিক মিশনের অংশ।
তিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেন নি! ২০১৫ সালে জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণায় উঠে আসে, ১৩ হাজার ৩০০ বছর পূর্বেই প্রথম মানুষটি উত্তর আমেরিকায় পৌঁছেছিলেন। তাই কলম্বাস সম্ভবত প্রথম আমেরিকার আবিষ্কারক নন।
প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে তিনি আটলান্টিক পাড়ি দেননি: আইসল্যান্ডের এক্সপ্লোরার নর্স ভাইকিং লেফ এরিক্সন যিনি প্রায় ৫০০ বছর আগে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে উত্তর আমেরিকায় (বর্তমানে নিউফাউন্ডল্যান্ড) পৌঁছান। যদিও ৯ অক্টোবর লেফ এরিক্সন ডে ১৯৫৪ সাল থেকে জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। তবে বেশীরভাগ লোকেরাই জানেন না এই দিনটি সম্পর্কে।
কলম্বাসের অনেক ক্রীতদাস ছিল: যদিও কলম্বাসের হীরা-মণি-মুক্তার মত সম্পদ ছিলো ছিলো না তবে অবশ্যই তার মানবসম্পদ ছিলো। নিউ ওয়ার্ল্ড অভিযানকালে কলম্বাস তার জাহাজের ক্রুদেরকে ছয়জন চাকরকে সঙ্গে নিতে বলেন। যাত্রার সময় এসব কৃতদাসরা ক্রুদের সঙ্গে কাজ করতেন। কলম্বাসের সমস্ত ক্রুরা পুরো সমুদ্রযাত্রার জন্য একই পোশাক পরতেন এবং কেউ জুতা পরতেন না।
তিনি গ্রেফতার হন: ১৫০০ সালে কলম্বাসের তৃতীয় অভিযানের সময় তাকে রয়্যাল কমিশনার গ্রেফতার করে তাকে স্পেনে আনা হয়। স্প্যানিশ রয়্যালটি তাকে উপনিবেশ হিজপানিওলা পরিচালনা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। অবশেষে তিনি মুক্তি পান।
তার নাম ক্রিস্টোফার কলম্বাস নয়: অবাক হচ্ছেন! যেহেতু তিনি ইতালীয় ছিলেন, তার জন্ম নামটি ক্রিসটোফোর কলম্বো বলে ধারণা করা হয়। স্প্যানিশ ভাষায়, তার নাম ক্রিস্টোবাল কলোন এবং সুইডিশ ভাষায়, এটি ক্রিস্টোফার কলম্বাস।
নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ
- বাঙালির বংশ পদবীর ইতিহাস
- গন্ধভাদালি লতার উপকারিতা
- ‘ময়ূর সিংহাসন’
- মিশরীয় সভ্যতা এবং নীল নদ
- মধ্যযুগের ইতিহাস
- ব্যবহারের আগে জানুন প্লাস্টিক বোতলে চিহ্নের মানে কী
- পবিত্র কাবা শরীফের অজানা যত তথ্য
- হ্যালুসিনেশন আসলে কী, রোগ না অন্য কিছু?
- পিরামিডের অজানা তথ্য…
- বিকাশ নগদ এবং রকেট’র ভুল নম্বরে টাকা চলে গেলে ফেরত পাবেন যেভাবে
- চুম্বকের আদ্যোপান্ত...
- ‘চুম্বন’ আদর ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
- ‘রক্ত’ রঙের রহস্য...
- ‘ধানমন্ডি’ নামকরণের ইতিহাস
- মানুষের পর বুদ্ধিমান প্রাণী...